ডিভোর্স শব্দটির সাথে বর্তমান সময়ে সবাই কম বেশি পরিচিত।পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে ডিভোর্সের হার ভয়াবহ বেশি হওয়ায় ডিভোর্সের কারণ ও কীভাবে ডিভোর্সের সংখ্যা কমানো যায় তা নিয়ে প্রতিনিয়তই সোশ্যালমিডিয়ায় আলোচনা করা হচ্ছে। বাংলাদেশের গত কয়েক বছরে ডিভোর্সের হার আশংকাজনকভাবে বেড়ে চলেছে। ডিভোর্স নানা কারণে হতে পারে। মানিয়ে চলার মনোভাবের অভাবঃ ডিভোর্সের কারণ পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, দুইজন মানুষের মাঝে মানিয়ে চলার মনোভাবের অভাব বিয়েতে ডিভোর্সের ক্ষেত্রে অন্যতম প্রভাব বিস্তার করে। বর্তমান যুগে প্রতিটি মানুষই ব্যক্তি স্বাধীনতা ও স্বতন্ত্রতা চায়। দুইজন স্বাধীন মানুষ যখন এক ছাদের নিচে এসে বসবাস শুরু করে তখনই ব্যক্তিত্বের সংঘাত আসন্ন হয়ে পড়ে। এরকম ক্ষেত্রে ধৈর্যের পরিচয় দিয়ে মানিয়ে চললেই বেশিরভাগ সংঘাত এড়ানো সম্ভব হয়। কিন্তু এই মানিয়ে চলার প্রবণতা যদি দুই পক্ষ থেকেই না আসে তখন নিজেদের মধ্যে মতভেদ ও মনোমালিন্য ধীরে ধীরে আরও প্রকট হয়ে ওঠে এবং দূরত্বের সৃষ্টি হয়।
২. পরস্পরকে ছাড় দিতে না চাওয়াঃ বিয়ের শুরুর থেকেই একে অপরকে ছাড় দেওয়ার অভ্যাস না গড়ে ওঠা পরবর্তীতে ডিভোর্স হওয়ার আরেকটি কারণ। স্বামী স্ত্রী দুইপক্ষই যদি একে অন্যের দোষ ও সীমাবদ্ধতাকে পাশ কাটিয়ে সম্পর্ককে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার মনোভাব না পোষণ করে তখন নিজেদের মাঝে ঝগড়াঝাটির পরিমাণ বেড়ে যায়। এই ঝগড়া বিদ্বেষ এক সময় বাড়তে বাড়তে সম্পর্কে তিক্ততা চলে আসে এবং একে অপরকে সহ্য করার ক্ষমতা চলে যায় যা পরবর্তীতে ডিভোর্সের মতন সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে অন্যতম প্রভাবক হিসেবে কাজ করে।
৩. একে অপরের প্রতি চাওয়া পাওয়ার মাঝে অসামঞ্জস্যঃ বর্তমান যুগে সবার মাঝেই অনেক বেশি পরিমাণে নিজের জীবনসঙ্গীর প্রতি প্রত্যাশা কাজ করে। অনেক সময় এই অত্যাধিক প্রত্যাশা পূরণ হয় না যার ফলে ব্যক্তির মনে চাপা ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
৪. জীবনসঙ্গীর পছন্দ অপছন্দ বুঝতে না চাওয়াঃ জীবনসঙ্গীর প্রতি অতিরিক্ত ভালোবাসা এবং অধিক প্রত্যাশার ফলে আমরা অনেক সময় আমাদের জীবনসঙ্গীর ভালো লাগা খারাপ লাগাকে আলাদা করে মূল্যায়ন করতে পারি না। নিজেদের পছন্দ অপছন্দ আমরা না বুঝেই আরেকজনের উপর চাপিয়ে দেই যার ফলে সম্পর্কে ভুল বোঝাবোঝির দেখা দেয়।
৫. দুই পরিবারের মাঝে মতবিরোধঃ বিয়ে দুইজন মানুষের মধ্যে শুধু না তাদের দুইটি পরিবারের মাঝেও ঘটে। কাজেই দুই পরিবার যদি সমমনা না হয় এবং তাদের মাঝে মতের পার্থক্য থাকে তবে তা স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কের মাঝেও তিক্ততার কারণ হয়ে উঠতে পারে। দুই পরিবারের মাঝেই পরিবারের নতুন সদস্যকে আপন করে নেওয়ার, তার সীমাবদ্ধতা ও ভুলত্রুটিকে ক্ষমা করার এবং সর্বোপরি তাকে পরিবারের একজন সদস্য হিসেবে মেনে নেওয়ার মনোভাব থাকতে হবে। অপরদিকে পরিবারের নতুন সদস্যটিকেও তার নতুন পরিবারের রীতিনীতি ও আচারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে।
৬. সন্দেহপ্রবণতাঃ যেকোন সম্পর্ককে নষ্ট করতে পারে সন্দেহের বীজ। স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কে পরস্পরকে বিশ্বাস করা একটি সুখী দাম্পত্য জীবনের জন্যে খুবই প্রয়োজন। কোন কারণে এই বিশ্বাসে ফাটল ধরলে বা কোন কারণ ছাড়াই একজন অপরজনকে অহেতুক অতিরিক্ত সন্দেহ করলে তার ফলাফল কখনোই ভালো হয় না।
৭. পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের অভাবঃ স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কে বিশ্বাস থাকা যেমন জরুরী, তেমনিভাবে একে অপরকে শ্রদ্ধা করাও খুবই প্রয়োজন। দুইজন মানুষ যদি একে অপরকে অসম্মান করে তাহলে তাদের জন্য বিয়েটি টিকিয়ে রাখা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে।
৮. নিজের ভুল স্বীকার করতে না চাওয়ার প্রবণতাঃ আত্ম অহংকার বা ইগোর কারণে ব্যক্তি অনেক সময় নিজের ভুল বুঝতে পারলেও তা স্বীকার করতে চায় না – তখন স্বামী স্ত্রীর মাঝে কলহ দেখা দেয়। স্বামী স্ত্রী কোন একপক্ষ বা দুইপক্ষের মাঝেই যদি নিজের যেকোন ভুল মেনে নিয়ে আত্মসংশোধনের মনোভাব না থাকে তাহলে একসাথে বাস করা কঠিন হয়ে যায়।
৯. তৃতীয় পক্ষের আগমণঃ স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কে তৃতীয় পক্ষ যে কেউ হতে পারে। তৃতীয় পক্ষ বলতে এমন কাউকে বোঝায় যে স্বামী স্ত্রীর মাঝে ভুল বোঝাবোঝি তৈরি করার মাধ্যমে কলহ সৃষ্টিতে পরোক্ষ ইন্ধন যোগায়।
১০. পরকীয়াঃ স্বামী স্ত্রী কারো বিবাহ বহির্ভূত অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে উঠলে তার ফলাফলে ডিভোর্স হতে পারে। বর্তমান সময়ে, পরকীয়ার কারণে অসংখ্য ডিভোর্স হতে দেখা যায়।
Matrimony in Bangladesh
১১. প্রাক্তন সম্পর্ক থেকে বের হতে না পারাঃ পারিবারিক ও সামাজিক চাপে পড়ে অনেক সময় ছেলে বা মেয়েকে তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধেই বিয়ের পিড়িতে বসতে হয়। এমন অবস্থায় তারা যদি তাদের অতীতের সম্পর্ককে ভুলে নতুন জীবন শুরু করতে মানসিকভাবে প্রস্তুত না থাকে তখন বিয়ে টিকিয়ে রাখা কষ্টকর হয়ে যায় দুইপক্ষের জন্যেই।
১২. শারীরিক ও মানসিক পীড়নঃ শারীরিক ও মানসিক পীড়ন বা অত্যাচারের ফলে অনেকেই ডিভোর্স নিতে বাধ্য হন। সাধারণত মহিলারা এই ধরণের অত্যাচারের সবচেয়ে বেশি স্বীকার হলেও, বর্তমানে পুরুষ পীড়নের সংখ্যায় কম নয়। সম্পর্কে পীড়নমূলক আচরণ দেখা দিলে যথাযথ কাউন্সিলিং এর মাধ্যমে তা সংশোধন করা সম্ভব। যদি এই পীড়নমূলক আচরণ কোনভাবেই বন্ধ না হয় তাহলে ডিভোর্স নিয়ে নেওয়া একটি বুদ্ধিমান সিদ্ধান্ত।
ডিভোর্সের কারণে প্রতিদিন সারা বিশ্ব শত শত পরিবার ভেঙে যাচ্ছে। পরিবারের শিশুরা বাবা মার ডিভোর্সের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়। তাদের স্বাভাবিক বেড়ে ওঠার প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়। আমাদের সমাজে ডিভোর্সি নারী পুরুষকে এখনও স্বাভাবিক চোখে দেখা হয় না কাজেই ডিভোর্সি ব্যক্তি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। বিয়ে জীবনের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। তাই সকল বিষয় মাথায় রেখে শতভাগ নিশ্চিত হয়েই আমাদের জীবন সাথী নির্বাচন করা উচিত। বিয়ের মতন একটি ঐশ্বরিক সম্পর্ককে টিকিয়ে রাখতে দুই পক্ষ থেকেই সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে। তবে সম্পর্কে ভালোবাসার থেকে যদি তিক্ততার পরিমাণ বেড়ে যায় তাহলে দুইজনের মঙ্গলের কথা চিন্তা করে আলাদা হয়ে যাওয়াই শ্রেয়।
Please share your comment in this Matrimony site in Bangladesh. Thanks